দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড় ফিতনা
দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড় ফিতনা
দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড় ফিতনা |
আখেরী যামানায় কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। বিশেষ করে সে সময় যে সমস্ত মুমিন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা
কিয়ামতের ১০টি বড় আলামত → (২য় পর্ব) - (মোট ১০ পর্ব)
আজ ২য় পর্বে থাকছে দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা। কিয়ামতের বড় ১০টি আলামতের একটিও এখনো প্রকাশিত হয়নি। বড় ১০টি আলামত কিয়ামতের খুবই কাছাকাছি সময়ে প্রকাশিত হবে।
দাজ্জালের আগমণ
আখেরী যামানায় কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত।
.
মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যে সমস্ত মুমিন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সমস্ত নবীই আপন উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন।
.
আমাদের নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামও দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন। ইবনে উমার (রদিয়াল্লাহু আ'নহু), নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন:
قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ إِنِّي لَأُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَقَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ
-
একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেন: আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান
করছি। সকল নাবীই তাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব, যা কোন নাবীই তাঁর উম্মাতকে বলেন নাই। তা হলো - দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ অন্ধ নন।[সহিহ বুখারী, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
নাওয়াস বিন সামআন ( রদিয়াল্লাহু আ'নহু ) বলেন:
ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدَّجَّالَ ذَاتَ غَدَاةٍ فَخَفَّضَ فِيهِ وَرَفَّعَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ قَالَ فَانْصَرَفْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَيْهِ فَعَرَفَ ذَلِكَ فِينَا فَقَالَ مَا شَأْنُكُمْ قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَكَرْتَ الدَّجَّالَ الْغَدَاةَ فَخَفَّضْتَ فِيهِ وَرَفَّعْتَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ قَالَ غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُ لِي عَلَيْكُمْ إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
একদা রসূল সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল বেলা আমাদের কাছে দাজ্জালের বর্ণনা করলেন। তিনি তার ফিতনাকে খুব বড় করে তুলে ধরলেন। বর্ণনা শুনে আমরা মনে করলাম নিকটস্থ খেজুরের বাগানের পাশেই সে হয়ত অবস্থান করছে। আমরা রসূল সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ এর নিকট থেকে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা আবার তাঁর কাছে গেলাম।
.
এবার তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করলেন: তোমাদের কি হলো? আমরা বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আপনি যেভাবে
দাজ্জালের আলোচনা করেছেন তা শুনে আমরা ভাবলাম হতে পারে সে খেজুরের বাগানের ভিতরেই রয়েছে।
.
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের উপর আমার আরো ভয় রয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেই যদি দাজ্জাল আগমণ করে তাহলে তোমাদেরকে ছাড়া আমি একাই তার বিরুদ্ধে ঝগড়া করবো।
আর আমি চলে যাওয়ার পর যদি সে আগমণ করে তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে হেফাযত করবে। আর আমি চলে গেলে আল্লাহই প্রতিটি মুসলিমকে হেফাযতকারী হিসেবে যথেষ্ট।[সুনান আত তিরমিজি, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
দাজ্জালের আগমণের সময় মুসলমানদের অবস্থা: দাজ্জালের আগমণের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানদের অবস্থা খুব ভাল থাকবে। তারা পৃথিবীতে শক্তিশালী এবং বিজয়ী থাকবে। সম্ভবতঃ এই শক্তির পতন ঘটানোর জন্যই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে।
দাজ্জাল অর্থ কী?
দাজ্জাল শব্দটি এসেছে, আরবী শব্দ দাজাল ( دخل ) থেকে।
যার অর্থ - সত্য ঢেকে দেওয়া, ছদ্ম আবরণে লুকিয়ে রাখা, প্রতারিত করা, মিথ্যা বলা ইত্যাদি।দাজ্জাল শব্দের প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে - মহা মিথ্যুক।
দাজ্জালের পরিচয়:
দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে। মুসলিমদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম _ তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিন বান্দাগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে।
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ তার যে সমস্ত পরিচয় উল্লেখ করেছেন মুমিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। জাহেল-মূর্খ ও হতভাগ্য ব্যতীত কেউ দাজ্জালের ধোকায় পড়বে না।
.
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ দাজ্জালকে স্বপ্নে দেখে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনাও প্রদান করেছেন। তিনি বলেন: দাজ্জাল হবে বৃহদাকার একজন যুবক পুরুষ, শরীরের রং হবে লাল, বেঁটে, মাথার চুল হবে কোঁকড়া, কপাল হবে উঁচু, বক্ষ হবে প্রশস্ত, চক্ষু হবে টেরা এবং আঙ্গুর ফলের মত উঁচু। দাজ্জাল নির্বংশ হবে। তার কোন সন্তান থাকবে না।
[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
দাজ্জালের কোন্ চোখ কানা থাকবে?
বিভিন্ন হাদীছে দাজ্জালের চোখ অন্ধ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন হাদীছে বলা হয়েছে দাজ্জাল অন্ধ হবে। কোন হাদীছে আছে তার ডান চোখ অন্ধ হবে। আবার কোন হাদীছে আছে তার বাম চোখ হবে অন্ধ।
.
মোটকথা তার একটি চোখ দোষযুক্ত হবে। তবে ডান চোখ অন্ধ হওয়ার হাদীসগুলো বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে। মোটকথা দাজ্জালের অন্যান্য লক্ষণগুলো কারো কাছে অস্পষ্ট থেকে গেলেও অন্ধ হওয়ার বিষয়টি কারো কাছে অস্পষ্ট হবে না।
[সহিহ বুখারী, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
দাজ্জালের দু’চোখের মাঝখানে কাফের লেখা থাকবে:
তাছাড়া দাজ্জালকে চেনার সবচেয়ে বড় আলামত হলো, তার কপালে কাফের ( كافر ) লেখা থাকবে। অপর বর্ণনায় আছে, তার কপালে (ك ف ر) এই তিনটি বর্ণ লেখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে।
.
অপর বর্ণনায় আছে, শিক্ষিত-অশিক্ষত সকল মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে। মোটকথা আল্লাহ মু’মিনের জন্যে অন্তদৃষ্টি খুলে দিবেন। ফলে সে দাজ্জালকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে। যদিও ইতিপূর্বে সে ছিল অশিক্ষিত।
কাফের ও মুনাফেক লোক তা দেখেও পড়তে পারবেনা। যদিও সে ছিল শিক্ষিত ও পড়ালেখা জানা লোক। কারণ কাফের ও মুনাফেক আল্লাহর অসংখ্য সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ দেখেও ঈমান আনয়ন করেনি।[সহিহ বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ এবং শরহুন নববী - ১৮/৬১, ফাতহুল বারী - ১৩/১০০]
দাজ্জালের ফিতনাসমূহ ও তার অসারতা:
আদম সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড় ফিতনা আর নেই। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে যা দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে।
.
দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে যে সম্পর্কে নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ আগেই সতর্ক করেছেন।
.
মুমিন বান্দাগণ এগুলো দেখে মিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ঈমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হবে।
দাজ্জাল নিজেকে রব্ব বা প্রভু হিসেবেও দাবী করবে। ঈমানদারের কাছে এ দাবীটি সুস্পষ্ট দিবালোকের মত মিথ্যা বলে প্রকাশিত হবে। দাজ্জাল তার দাবীর পক্ষে যত বড় অলৌকিক ঘটনাই পেশ করুক না কেন, মুমিন ব্যক্তির কাছে এটি সুস্পষ্ট হবে যে,সে একজন অক্ষম মানুষ, পানাহার করে, নিদ্রা যায়, পেশাব-পায়খান করে। সর্বোপরি সে হবে অন্ধ। যার ভিতরে মানবীয় সব দোষ-গুণ বিদ্যমান সে কিভাবে রব্ব ও আল্লাহ হতে পারে!
একজন সত্যিকার মু'মিনের বিশ্বাস হলো:
মহান আল্লাহ সর্বপ্রকার মানবীয় দোষ-ত্রুটি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। কোন সৃষ্টজীবই তার মত নয়। আল্লাহকে দুনিয়ার জগতে কোন মানুষের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়।
দাজ্জাল বর্তমানে কোথায় আছে?
ফাতেমা বিনতে কায়স (রদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
"আমি মসজিদে গমণ করে নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ এর সাথে সলাত(নামায) আদায় করলাম। আমি ছিলাম মহিলাদের কাতারে। তিনি নামায শেষে হাসতে হাসতে মিম্বারে উঠে বসলেন।
.
প্রথমেই তিনি বললেন: প্রত্যেকেই যেন আপন আপন জায়গায় বসে থাকে।অতঃপর তিনি বললেন:তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে একত্রিত করেছি?তাঁরা বললেন: আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই ভাল জানেন।
অতঃপর তিনি বললেন: আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যে একত্রিত করেছি যে 'তামীম দারী' ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার কাছে আগমণ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন ঘটনা বলেছে যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করতাম।
লাখ্ম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশ(৩০) জন লোকের সাথে সে সাগর পথে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শিকার হয়ে এক মাস পর্যন্ত তারা সাগরেই ছিল। অবশেষে তারা সাগরের মাঝখানে একটি দ্বীপে অবতরণ করলো। দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করে তারা মোটা মোটা এবং প্রচুর চুল বিশিষ্ট একটি অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত থাকার কারণে প্রাণীটির অগ্রপশ্চাৎ নির্ধারণ করতে সক্ষম হলো না।
.
তারা বলল: অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি?সে বললো:
আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা।তারা বললো: কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে একটি ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললো: হে লোক সকল!তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
তামীম দারী বলেন: প্রাণীটি যখন একজন লোকের কথা বললো, তখন আমাদের ভয় হলো যে হতে পারে সে একটি শয়তান। তথাপিও আমরা ভীত হয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে ঘরটির ভিতরে প্রবেশ করলাম।
সেখানে প্রবেশ করে আমরা বৃহদাকার একটি মানুষ দেখতে পেলাম। এত বড় আকৃতির মানুষ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তার হাত দু’টিকে ঘাড়ের সাথে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালীর মধ্যবর্তী স্থানে লোহার শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হয়েছে।
.
আমরা বললাম: মরণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললো: তোমরা আমার কাছে আসতে সক্ষম হয়েছ। তাই আগে তোমাদের পরিচয় দাও। আমরা বললাম: আমরা একদল আরব মানুষ নৌকায় আরোহন করলাম। সাগরের প্রচন্ড ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করলো। অবশেষে তোমার দ্বীপে উঠতে বাধ্য হলাম। দ্বীপে প্রবেশ করেই প্রচুর পশম বিশিষ্ট এমন একটি জন্তুর সাক্ষাৎ পেলাম, প্রচুর পশমের কারণে যার অগ্রপশ্চাৎ চেনা যাচ্ছিল না।
- আমরা বললাম:
অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি?
- সে বললো:
আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা।
- আমরা বললাম:
কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?
- অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে এই ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললো:
হে লোক সকল!
তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের নিকট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
.
তাই আমরা তার ভয়ে তোমার কাছে দ্রুত আগমণ করলাম। হতে পার তুমি একজন শয়তান - এ ভয় থেকেও আমরা নিরাপদ নই।
- সে বললো:
আমাকে তোমরা ‘বাইসান’ সম্পর্কে সংবাদ দাও। (বাইসান, ইরাকের একটি অঞ্চল)
- আমরা তাকে বললাম:
বাইসানের কী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো?
- সে বললো:
আমি তথাকার খেজুরের বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। সেখানের গাছগুলো এখনও ফল দেয়?
- আমরা বললাম: হ্যাঁ।
- সে বললো:
সে দিন বেশী দূরে নয় যে দিন গাছগুলোতে কোন ফল ধরবেনা।
- অতঃপর সে বললো:
আমাকে বুহাইরাতুত্ তাবারীয়া সম্পর্কে সংবাদ দাও।
- আমরা তাকে বললাম:
বুহাইরাতুত্ তাবারীয়ার কী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো?
- সে বললো:
আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে?
- আমরা বললাম:
তথায় প্রচুর পানি আছে।
- সে বললো:
অচিরেই তথাকার পানি শেষ হয়ে যাবে।
.
- সে পুনরায় বললো:
আমাকে যুগার নামক ঝর্ণা সম্পর্কে সংবাদ দাও।
- আমরা তাকে বললাম:
সেখানকার কী সম্পর্কে তুমি জানতে চাও?
- সে বললো:
আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? লোকেরা কি এখনও সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে?
- আমরা বললাম:
তথায় প্রচুর পানি রয়েছে। লোকেরা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে।
.
- সে আবার বললো:
আমাকে উম্মীদের নবী সম্পর্কে জানাও।
- আমরা বললাম:
সে মক্কায় আগমণ করে বর্তমানে মদীনায় হিজরত করেছে।
- সে বললো:
আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছে?
বললাম: হ্যাঁ।
- সে বললো:
ফলাফল কি হয়েছে?
- আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে,
পার্শ্ববর্তী আরবদের উপর তিনি জয়লাভ করেছেন। ফলে তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে।
- সে বলল: তাই না কি?
আমরা বললাম: তাই।
- সে বললো:
তার আনুগত্য করাই তাদের জন্য ভাল।
.
এখন আমার কথা শুন। আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই ফেরেশতাগণ কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে।
.
হাদীছের বর্ণনাকারী ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেন:
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ হাতের লাঠি দিয়ে মিম্বারে আঘাত করতে করতে বললেন:
এটাই মদীনা, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা। অর্থাৎ এখানে দাজ্জাল আসতে পারবে না।
.
অতঃপর নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ মানুষকে লক্ষ্য করে বললেন:
তামীম দারীর হাদীছটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তার বর্ণনা আমার বর্ণনার অনুরূপ হয়েছে। বিশেষ করে মক্কা ও মদীনা সম্পর্কে।
- শুনে রাখো!
সে আছে শাম দেশের সাগরে (ভূমধ্য সাগরে) অথবা আরব সাগরে। তা নয়, সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। এই বলে তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।
.
ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেন:
“আমি এই হাদীছটি নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ এর নিকট থেকে মুখস্থ করে রেখেছি।"
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
দাজ্জালের যে সমস্ত ক্ষমতা দেখে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বে:
(ক)একস্থান হতে অন্য স্থানে দ্রুত পরিভ্রমণ: নাওয়াস বিন সামআন থেকে বর্ণিত,নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাজ্জালের চলার গতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:দ্রুতগামী বাতাস বৃষ্টিকে যেভাবে চালিয়ে নেয় দাজ্জালের চলার গতিও সে রকম হবে।[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
তিনি আরো সংবাদ দিয়েছেন যে,
মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চল সে পরিভ্রমণ করবে। মক্কা ও মদীনার সমস্ত প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ তলোওয়ার হাতে নিয়ে পাহারা দিবে।
.
(খ) দাজ্জালের সাথে থাকবে জান্নাত-জাহান্নাম: দাজ্জালের সাথে জান্নাত এবং জাহান্নাম থাকবে। প্রকৃত অবস্থা হবে সম্পূর্ণ বিপরীত। দাজ্জালের জাহান্নামের আগুন প্রকৃতপক্ষে সুমিষ্ট পানি এবং জান্নাত হবে জাহান্নামের আগুন।
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
لَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا مَعَ الدَّجَّالِ مِنْهُ مَعَهُ نَهْرَانِ يَجْرِيَانِ أَحَدُهُمَا رَأْيَ الْعَيْنِ مَاءٌ أَبْيَضُ وَالْآخَرُ رَأْيَ الْعَيْنِ نَارٌ تَأَجَّجُ فَإِمَّا أَدْرَكَنَّ أَحَدٌ فَلْيَأْتِ النَّهْرَ الَّذِي يَرَاهُ نَارًا وَلْيُغَمِّضْ ثُمَّ لْيُطَأْطِئْ رَأْسَهُ فَيَشْرَبَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مَاءٌ بَارِدٌ وَإِنَّ الدَّجَّالَ مَمْسُوحُ الْعَيْنِ عَلَيْهَا ظَفَرَةٌ غَلِيظَةٌ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ كَاتِبٍ وَغَيْرِ كَاتِبٍ
দাজ্জালের সাথে যা থাকবে তা আমি অবগত আছি। তার সাথে দু’টি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাবে।
যার সাথে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ উহা সুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে কাফের লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবে।
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
.
(গ) দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করবে:
দাজ্জাল তার কর্মকান্ডে শয়তানের সহযোগীতা নিবে। শয়তান কেবল মিথ্যা ও গোমরাহী এবং কুফরী কাজেই সাহায্য করে থাকে।
- নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবে, আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে?
- সে বলবে, অবশ্যই মানব।
- এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবে:
হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক।
[সহিহুল জামে আস সাগীর - ৭৭৫২]
(হে আল্লাহ!
আমরা আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।
(ঘ) জড় পদার্থ ও পশুরাও দাজ্জালের ডাকে সাড়া দেবে:
দাজ্জালের ফিতনার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন। দাজ্জাল আকাশকে আদেশ দিবে বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্যে। আকাশ তার আদেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। যমিনকে ফসল উৎপন্ন করতে বলবে। যমিন ফসল উৎপন্ন করবে।
.
চতুষ্পদ জন্তুকে ডাক দিলে তারা দাজ্জালের ডাকে সাড়া দিবে। ধ্বংস প্রাপ্ত ঘরবাড়িকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে।
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
“দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। এতে তারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে, যমিন ফসল উৎপন্ন করবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা-তাজা হবে এবং পূর্বের তুলনায় বেশী দুধ প্রদান করবে।
অতঃপর অন্য একটি জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। লোকেরা তার কথা প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের নিকট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসবে। এতে তারা চরম অভাবে পড়বে। তাদের ক্ষেত-খামারে চরম ফসলহানি দেখা দিবে। দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। গুপ্তধনগুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের ন্যায় তার পিছে পিছে চলতে থাকবে।
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
(ঙ) দাজ্জাল একজন মুমিন যুবককে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে:নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
দাজ্জাাল বের হয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ তাই সে মদীনার নিকটবর্তী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমণ করবেন। তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মুমিন।দাজ্জালকে দেখে তিনি বলবেন,আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রসূল সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ আমাদেরকে সাবধান করেছেন।
তখন দাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবে;
আমি যদি একে হত্যা করে জীবিত করতে পারি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবে?
- লোকেরা বলবে, না।
অতঃপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে।
- এ পর্যায়ে যুবকটি বলবে;
আল্লাহর শপথ!
তুমি যে মিথ্যুক দাজ্জাল - এ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো। দাজ্জাল তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না।
[সহিহ বুখারী, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
.মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে উক্ত যুবক দাজ্জালকে দেখে বলবে;হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ আমাদেরকে সাবধান করেছেন।
- অতঃপর দাজ্জাল তার অনুসারীদেরকে বলবে,একে ধর এবং প্রহার কর। তাকে মেরে-পিটিয়ে যখম করা হবে।অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবে, এখনও কি আমার প্রতি ঈমান আনবে না?
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
- উক্ত যুবক বলবেন,
তুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাত লাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে।
- অতঃপর বলবে,
উঠে দাড়াও। তিনি উঠে দাড়াবেন।
- দাজ্জাল বলবে:
এখনও ঈমান আনবে না?
- তিনি বলবেন,
তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে এখন আমার বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
- অতঃপর তিনি বলবেন,
হে লোক সকল! আমার পরে আর কারো সাথে এরূপ করতে পারবেনা। অতঃপর দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় যবেহ করার স্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে যবেহ করতে ব্যর্থ হবে। অতঃপর তাঁর হাতে-পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
- নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
“এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহা সত্যের সাক্ষ্য দানকারী।"
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
দাজ্জাল কোথা থেকে বের হবে?
দাজ্জাল বের হওয়ার স্থান সম্পর্কেও রসূল সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা দিয়েছেন। সে পূর্ব দিকের পারস্য দেশ থেকে বের হবে। সে স্থানটির নাম হবে খোরাসান।
সেখান থেকে বের হয়ে সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করবে। তবে মক্কা এবং মদীনায় প্রবেশ করতে পারবেনা। ফেরেশতাগণ সেদিন মক্কা-মদীনার প্রবেশ পথসমূহে তরবারি নিয়ে পাহারা দিবে।
.
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
“পূর্বের কোন একটি দেশ থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে যার বর্তমান নাম - 'খোরাসান'।" (ইরানের একটি অঞ্চল)
[সুনান আত তিরমিজি, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ এবং সহিহুল জামে আস সাগীর - ৩৩৯৮]
দাজ্জাল মক্কা ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না:
সহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী দাজ্জালের জন্যে মক্কা ও মদীনাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল স্থানেই সে প্রবেশ করবে।
ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত দাজ্জালের হাদীছে এসেছে, অতঃপর দাজ্জাল বললো;আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো।
.
তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে ফেরেশতাগণ আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে।
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
সে সময় মদীনা শরীফ তিনবার কেঁপে উঠবে এবং প্রত্যেক মুনাফেক এবং কাফেরকে বের করে দিবে। যারা দাজ্জালের নিকট যাবে এবং তার ফিতনায় পড়বে তাদের অধিকাংশই হবে মহিলা।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচানোর জন্য পুরুষেরা তাদের স্ত্রী, মা, বোন, কন্যা, ফুফু এবং অন্যান্য স্বজন মহিলাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখবে।
দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন থাকবে?
সাহাবীগণ রসূল সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ কে জিজ্ঞেস করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে?
উত্তরে তিনি বলেছেন;
সে চল্লিশ(৪০) দিন অবস্থান করবে।
- প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত লম্বা।
- দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মত।
- তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত।
- আর বাকী দিনগুলো(৩৭ দিন) দুনিয়ার স্বাভাবিক দিনের মতই হবে।
.
আমরা বললাম;
যে দিনটি এক বছরের মত দীর্ঘ হবে সে দিন কি এক দিনের সলাতই(নামাজ) যথেষ্ট হবে?
উত্তরে তিনি বললেন;
না, বরং তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করে সলাত(নামাজ) পড়বে।
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
কারা দাজ্জালের অনুসরণ করবে?
দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী, তুর্কী এবং অনারব লোক। তাদের অধিকাংশই হবে গ্রাম্য মূর্খ এবং মহিলা। ইহুদীরা মিথ্যুক কানা দাজ্জালের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী দাজ্জাল হবে তাদের বাদশা। তার নেতৃত্বে তারা বিশ্ব পরিচালনা করবে।
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
"দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী এবং মহিলা।"
[মুসনাদে ইমাম আহমাদ, আহমেদ শাকেরের মতে সহিহ]
তিনি আরো বলেন,
“ইস্পাহানের সত্তর(৭০) হাজার ইহুদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে। তাদের সবার পরনে থাকবে সেলাই বিহীন চাদর।"
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
গ্রাম্য অশিক্ষিত লোকেরা মূর্খতার কারণে এবং দাজ্জালের পরিচয় সম্পর্কে তাদের জ্ঞান না থাকার কারণে দাজ্জালের অলৌকিক ক্ষমতা দেখে তারা ফিতনায় পড়বে। মহিলাদের ব্যাপারটিও অনুরূপ। তারা সহজেই যে কোন জিনিষ দেখে প্রভাবিত হয়ে থাকে।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়:
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ দাজ্জালের ফিতনা হতে রেহাই পাওয়ার উপায়ও বলে দিয়েছেন। তিনি উম্মাতকে একটি সুস্পষ্ট দ্বীনের উপর রেখে গেছেন। সকল প্রকার কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সকল অকল্যাণের পথ হতে সতর্ক করেছেন।
উম্মাতের উপরে যেহেতু দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড় তাই তিনি দাজ্জালের ফিতনা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করেছেন এবং দাজ্জালের লক্ষণগুলো সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যাতে মুমিন বান্দাদের জন্য এই প্রতারক, ধোকাবাজ ও মিথ্যুক দাজ্জালকে চিনতে কোনরূপ অসুবিধা না হয়।
ইমাম সাফারায়েনী (রহ'মাতুল্লাহি আ'লাইহি) বলেন:
প্রতিটি বিজ্ঞ মুসলিমের উচিৎ তার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পরিবার এবং সকল নারী-পুরুষদের জন্য দাজ্জালের হাদীছগুলো বর্ণনা করা। বিশেষ করে ফিতনায় পরিপূর্ণ আমাদের বর্তমান যামানায়।
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়গুলো নিম্নরূপ:-
(১) ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরা:
ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরা এবং ঈমানের উপর অটল থাকাই দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। যে মুমিন আল্লাহর নাম ও তাঁর অতুলনীয় সুমহান গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে সে অতি সহজেই দাজ্জালকে চিনতে পারবে। সে দেখতে পাবে দাজ্জাল খায়, পান করে।
মু’মিনের আকীদা এই যে,
আল্লাহ তা’আলা পানাহার ও অন্যান্য মানবীয় দোষ-গুণ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। যে পানাহারের প্রতি মুখাপেক্ষী সে কখনও আল্লাহ বা রব্ব হতে পারেনা। দাজ্জাল হবে অন্ধ। আল্লাহ এরূপ দোষ-ত্রুটির অনেক উর্ধে। আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অধিকারী মুমিনগণের মনে প্রশ্ন জাগবে, যে নিজের দোষ থেকে মুক্ত হতে পারেনা সে কিভাবে প্রভু হতে পারে? মু’মিনের আকীদা এই যে,
আল্লাহকে দুনীয়ার জীবনে দেখা সম্ভব নয়। অথচ মিথ্যুক দাজ্জালকে মুমিন-কাফের সবাই দুনিয়াতে দেখতে পাবে।
(২) দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা:
আয়েশা (রদিয়াল্লাহু আ'নহা) বলেন;
“আমি নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ কে সলাতের(নামাজ) ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি।
[সহিহ বুখারী, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
তিনি নামাযের শেষ তাশাহুদে বলতেন;
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
হে আল্লাহ!
আমি আপনার কাছে কবরের আযাব, জাহান্নামের আযাব, জীবন-মরণের ফিতনা এবং মিথ্যুক দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।"
[সহিহ বুখারী, অধ্যায় - জানাজা, হাদিস সহিহ]
.
(৩) দাজ্জাল থেকে দূরে থাকা:
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ দাজ্জালের নিকট যেতে নিষেধ করেছেন। কারণ সে এমন একজন লোকের কাছে আসবে, যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে। দাজ্জালের কাজ-কর্ম দেখে সে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে যাবে।
মুমিনের জন্য উত্তম হলো সম্ভব হলে সে সময়ে মদীনা অথবা মক্কায় বসবাস করার চেষ্টা করা। কারণ দাজ্জাল তথায় প্রবেশ করতে পারবেনা।
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
যে ব্যক্তি দাজ্জাল বের হওয়ার কথা শুনবে সে যেন তার কাছে না যায়। আল্লাহর শপথ! এমন একজন লোক দাজ্জালের নিকটে যাবে, যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে।
অতঃপর সে দাজ্জালের সাথে প্রেরিত সন্দেহময় জিনিষগুলো ও তার কাজ-কর্ম দেখে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে তার অনুসারী হয়ে যাবে।
(হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।)
.
(৪) সূরাহ কাহাফ পাঠ করা:
নাবী সোল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম _ দাজ্জালের ফিতনার সম্মুখীন হলে মুমিনদেরকে সূরা কাহাফ মুখস্থ করতে এবং তা পাঠ করতে আদেশ করেছেন।
- তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি সূরাহ কাহাফের প্রথম দশটি(১০টি) আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযতে থাকবে।"
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
.
সূরাহ কাহাফ পাঠের নির্দেশ সম্ভবত এজন্য হতে পারে যে,
এই সূরায় আল্লাহ তা’আলা বিস্ময়কর বড় বড় কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মুমিন ব্যক্তি এগুলো গভীরভাবে পাঠ করলে দাজ্জালের বিস্ময়কর ঘটনা দেখে কিছুতেই বিচলিত হবেনা। এতে সে হতাশ হয়ে বিভ্রান্তিতেও পড়বে না।
দাজ্জালের শেষ পরিণতি:
সহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী _ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ'লাইহিস সালাম) এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে।
বিস্তারিত বিবরণ এই যে,মক্কা-মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই সে প্রবেশ করবে। তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে।
.
ঠিক সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপর ঈসা (আ'লাইহিস সালাম) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে। তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন।
.
দাজ্জাল সে সময় বায়তুল মাকদিসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা (আ'লাইহিস সালাম) ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আ'লাইহিস সালাম) _ কে দেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে।
ঈসা (আ'লাইহিস সালাম) তাকে লক্ষ্য করে বলবেন;
“তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাই পাবেনা। ঈসা (আ'লাইহিস সালাম) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন।
অতঃপর মুসলিমরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলিমদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না।
গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে,
হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর।পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে,হে মুসলিম!আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর।
তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ বলে পরিচিত।
[নেহায়া, আল ফিতান ওয়াল মালাহিম - ১/১২৮-১২৯]
সহীহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রদিয়াল্লাহু আ'নহু) হতে বর্ণিত,
নাবী সোল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى يَخْتَبِئَ الْيَهُودِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْحَجَرِ وَالشَّجَرِ فَيَقُولُ الْحَجَرُ أَوِ الشَّجَرُ يَا مُسْلِمُ يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ إِلَّا الْغَرْقَدَ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ الْيَهُودِ
ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবে না, যতক্ষণ না মুসলিমেরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে। অতঃপর মুসলমানগণ ইহুদীরকে হত্যা করবে। ইহুদীরা গাছ ও পাথরের আড়ালে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে আশ্রয় দিবে না।গাছ বা পাথর বলবে,হে মুসলিম!হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো।
তবে ‘গারকাদ’ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবে না। এটি ইহুদীদের গাছ বলে পরিচিত।
[সহিহ মুসলিম, অধ্যায় - ফিতনা, হাদিস সহিহ]
{ লেখক : শাইখ আবদুল্লাহ শাহেদ }