হঠাৎ বমি হলে কি করণীয় এবং কেন হয়
হঠাৎ বমি হলে কি করণীয় এবং কেন হয়
হঠাৎ বমি হলে কি করণীয় এবং কেন হয় |
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ওষুধ খাওয়াবেন না। শিশু অতিরিক্ত বমি করলে এবং অতিরিক্ত বমির পর যদি দেখেন শিশু প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে, হাত-পা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, খিঁচুনি হচ্ছে বা চোখ উল্টে যাচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করছে, তখন শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
কেস ১ঃ
আয়ানের বয়স দেড় বছর। মায়ের ভাষায় বাচ্চা কিছুই খায় না বরং যা খায় সব বমি করে দেয়। ওর কোন জ্বর, পায়খানা বা পেশাবের সমস্যা নাই। হাসিখুশি, ওজন বয়সের তুলনায় একটু বেশীই। সব পরীক্ষা করে দেখা গেলো কোন সমস্যা নাই।
ভালো করে জিজ্ঞাসা করে জানা গেলো আয়ানের মা বেশী করে খাওয়ানোর জন্য খাবার ব্লেন্ড করে বড় সিরিঞ্জে ভরে সারাদিন ওকে জোর করে খাওয়ায়। এখন এমন অবস্থা, আয়ান সিরিঞ্জ দেখলেই ভয়ে বমি করে দেয়। মাকে অনেক বুঝিয়ে বলার পর আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে এসেছে আয়ান স্বাভাবিক খাবার ও সময়ের গ্যাপ দিয়ে খাওয়ানোতে।
কেস ২ঃ
আরেক মা হঠাৎ রাতের বেলা ১ বছরের বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে হাজির, সন্ধ্যায় বাচ্চার দাদা শখ করে নাতিকে কাঁঠাল খাওয়ানোর পর বাচ্চার পেট ফুলে সমানে বমি। একটুর জন্য অপারেশন লাগেনি, ঔষধেই বাচ্চা ভালো হয়ে যায়।
কেস ৩ঃ
সুপ্তি সকাল বেলা উঠে কিছুই খেতে চায়, অনেকবেলা করে নাস্তা করে। আজ সকালে ওর মা জোর করে একটা কলা খাওয়ানোর পর থেকেই পেট ব্যথা, বমি। এরপর আর কিছুই খাচ্ছে না, বমি বমি ভাব করছে। পেটব্যথাও কমছে না......
আজকের আলোচনা, আপনার শিশু যদি হঠাৎ বমি শুরু করে, তাহলে কি করবেন?
যে কারনেই বমি করুক শিশু, বমি করার প্রধান অপকারিতা পানিশূন্যতা। আমাদের ১ম লক্ষ্য থাকবে তাই বাচ্চা যেন পানিশূন্য না হয়ে যায়, দুর্বল না হয়ে পরে।
১. প্রথমেই ছোট বাবু হলে বাচ্চাকে বাদিকে কাত করে উপুড় করে শোয়াতে হবে যেন বমি ফুসফুসে না চলে যায় ; আর বড় বাচ্চা হলে গামলা, বালতি বা বেসিন শক্ত করে ধরে দাড় করাবেন বা বসিয়ে নিবেন। নাহলে হঠাৎ মাথা ঘুরাতে পারে।
২. মুখটা ভালো করে পরিস্কার করে দিতে হবে।
৩. খাবার নিয়ে জোর না করে বিশ্রাম নিতে দিবেন অন্তত ১৫-২০ মিনিট ।
৪. এরপর প্রয়োজনে অল্প অল্প করে পানি ১ চামচ করে ১৫-২০ মিনিট পর পর দিবেন। বমি আর না হলে ঘন্টা খানেক পর একটু জাউ বা তরল খাবার দিবেন, দেখবেন বমি করে কিনা। না করলে অল্প অল্প করে তরল খাবার দিবেন ঘন্টায় ঘন্টায়। পরের দিন থেকে আবার স্বাভাবিক সব খাবার শুরু করবেন।
৫. একটু বড় বাচ্চাদের বেলায়, যা খাচ্ছে তাই বমি করে দিচ্ছে এমন ক্ষেত্রে বাচ্চা যেন পানি শূন্যতায় না ভুগে এজন্য ১৫-২০ মি পর পর ১-২ চামচ করে পানি দিবেন, কিছু বমি হলেও যেন কিছু পেটে থাকে। হাতের কাছে বমি বন্ধের ঔষধ না থাকলে স্প্রাইট বা সেভেনআপ ( রংহীন কোমল পানীয়) গ্লাসে ঢেলে গ্যাস বের হয়ে যাওয়ার পর এক চুমুক করে খাওয়াবেন ; অথবা ললি আইসক্রিম চুষতে দিবেন। এতে খুব তাড়াতাড়ি বমি বন্ধ হয়।
৬. বমি কারণ খুঁজবেন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
কখন হাসপাতালে নিবেনঃ
১. পানিশূন্যতা দেখা দিলে বাচ্চাকে কিছুই খাওয়াতে পারছেন না, নেতিয়ে যাচ্ছে।
২. বমির সাথে রক্ত গেলে, খিচুনি হলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে।
৩. বমির আগে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে থাকলে,
৪. পেট ফুলে গেলে, পায়খানা, প্রশ্রাব বন্ধ হয়ে গেলে।
৫. গায়ে চাকা চাকা র্যাশ দেখা দিলে।
কি কি কারণে বমি হতে পারে?
জ্বর ছাড়াঃ
১. ভাইরাল ডায়রিয়া
২. খাবারে এলার্জি
৩. ফুড পয়জনিং
৪. হেড ইনজুরি বা মাথায় আঘাত পেলে
জ্বর / ব্যথাসহঃ
১. প্রশ্রাবে ইনফেকশন
২. এ্যাপেন্ডিসাইটিস
৩. রক্ত আমাশয়
শুধু রাতে বমি করে এমনঃ
১. রিফ্ল্যাক্স যা এসিডিটির জন্য হয়, বেশী ভাজাপোড়া, মশলাযুক্ত, চর্বিযুক্ত খাবার, চকলেট, চিজ, মাল্টা কমলা জাতীয় ফল, টমেটো প্রভৃতি খাবারে এলসিডি থেকে বমি হতে পারে।
২. বার বার ফুসফুসে প্রদাহ, টনসিলে ইনফেকশন, এ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে বাচ্চা কাশির সাথে বমিও করে ফেলে।
বার বার বমি হওয়ার কারনঃ
১. মোশন সিকনেস বা জার্নিতে বমি হওয়া
২. কিছু কিছু দীর্ঘমেয়াদী ঔষধ
৩. কিডনীর জন্মগত সমস্যা
৪. শিশুর হরমোনজনিত রোগ, ডায়াবেটিস, এড্রেনাল গ্ল্যান্ডের সমস্যা ( মেটাবলিক)
৫. মানসিক অস্থিরতা বা দুশ্চিন্তা
৬ . পিরিয়ডিক সাইক্লিক্যাল ভমিটিং ( প্রতিমাসো ১ বার বমি হয়)
বয়স ভিত্তিক বমির কারণঃ
নবজাতকের ক্ষেত্রেঃ
১.জন্মের পর পরই যদি বমি শুরু করে তাহলে খাদ্যনালীতে জন্মগত ত্রুটি আছে ধরে নিতে হবে। বমি যদি সবুজ পিত্তের রং হয় তাহলে খাদ্য নালি বন্ধ হয়ে আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
২.জন্মের কিছু দিন পর থেকে হলে, দেখতে হবে বাচ্চার ঘুম, পেশাব ও ওজন ঠিক আছে কিনা। স্বাভাবিক ভাবেও একটা বাচ্চা সারাদিনে অনেকবার বমি করতে পারে যাকে দুধ তোলা বলা হয় প্রচলিত ভাষায়।
৩. যদি বমির রং সবুজ না হয়, দূরে ছিটকে গিয়ে পরে ও বমি আগে পেটের উপরের দিকে চাকা দেখা যায়, বমির পর পরই বাচ্চা আবার ক্ষুধার্ত হয়ে পরে তাহলেও খাদ্যনালীর আরো কিছু জন্মগত সমস্যা ধরে নিগে হনে।
৪. অসুস্থ নবজাতকও বমি করতে পারে শরীরে ইনফেকশন হলে। হরমোনের সমস্যার জন্য ও বাচ্চার
বমি হতে পারে। এরসাথে বাচ্চার প্রজননতন্ত্রের সমস্যা থাকতে পারে।
বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রেঃ
১.তীব্র জ্বরে অনেক বাচ্চা বমি করে থাকে।
২.প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়ালেও বাচ্চার বমি হতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক গ্যাপ দিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াবেন ও ঢেকুর তোলাবেন। অযথা ও জোর করে খাওয়াবেন না।
৩. অধিকাংশ ভাইরাল ডায়রিয়াগুলো প্রথমে বমি দিয়ে শুরু হয়, পরে পাতলা পায়খানা শুরু হয়।
৪. পেটের যেকোন সমস্যায় পেট ফাঁপলে, গ্যাস হলে পেট ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমি হয়।
৫. প্রশ্রাবে ইনফেকশন হলেও বমি ও পেট ব্যথা হতে পারে।
৬. মাইগ্রেন, সাইনাসের ব্যথা, ব্রেইনে ইনফেকশনেও বমি হতে পারে।
৭. গলায় ইনফেকশন,ঠান্ডাকাশি ও শ্বাসকষ্ট হলেও বমির সাথে কফ যায়।
৮. পেটে কৃমি হলে বা জন্ডিস হলেও বমি বমি ভাব হয়ে পেট ব্যথা হয়।
দীর্ঘদিন ব্যাপী বমি হলে প্রতিকার কি?
১.পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা উচিত, পেটের নাড়িতে কোন সমস্যা আছে কি না।
২. এলার্জি আছে এমন খাবার খাওয়াচ্ছেন কিনা।
৩.জোর করে অতিরিক্ত খাওয়াচ্ছেন কিনা। অনেক মা বাচ্চাদের ঠেসে জোর করে খাওয়ানোর ফলে দেখা যায়, মাকে রান্না ঘরে খাবার আনতে দেখলেই বাচ্চা বমি শুরু করে।
৪. বাচ্চা মানসিক চাপের মধ্যে আছে কিনা। প্রতিমাসে বমি করা বাচ্চাদের ( Periodic cyclical vomiting) ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন শারীরিক সমস্যা আছে কিনা। এদের খাবার, ঘুম নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. মৃগীর রোগের একটা ধরন হচ্ছে হঠাৎ পেটে ব্যথা বমি হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। দীর্ঘদিন বমি থাকলে এদিকটাও ভাবতে হবে।
৬. কোন নির্দিষ্ট খাবারে এলার্জি থাকলেও বাচ্চারা বমি করতে পারে, গায়ে র্যাশ থাকুক আর নাই থাকুক। অনেক বাচ্চারই গরুর দুধে এলার্জি থেকে বমি হয়।
কাজেই বমি বার বার হলে, চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি কেন বমি হলো তাও বের করতে হবে যেন বমির সমস্যা থেকে স্থায়ী প্রতিকার পাওয়া যায়।
ডাঃ লুনা পারভীন
শিশু বিশেষজ্ঞ
আপনার স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যের জন্য dxn পণ্য ব্যবহার করুন।
আরো বিস্তারিত জানার জন্য অনুগ্রহ করে DXN Produts info