মহানবী সাঃ এর সন্তানদের নাম

মহানবী সাঃ এর সন্তানদের নাম


মহানবী সাঃ এর সন্তানদের নাম,কাসিম - অর্থ - বণ্টনকারী,ইব্রাহিম -অর্থ -আদি পিতা,জয়নাব - অর্থ - একটি সুগন্ধি ফুল,রুকাইয়াহ - অর্থ - উন্নতশীলা,উম্মে কুলসুম - অর্থ -স্বাস্থ্যবানের মা,ফাতিমা - অর্থ - দুধ ছাড়ানো শিশুর মা,ফাতিমার রা. মেয়ে সন্তান ছিল দুইজন— উম্মে কুলসুম ও যয়নব।




মহানবী সাঃ এর সন্তানদের নাম
মহানবী সাঃ এর সন্তানদের নাম


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুটির সুন্দর নাম রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন; “কিয়ামতের দিন আপনার নামে এবং আপনার পিতার নামে ডাকা হবে। সুতরাং আপনার নামগুলি সুন্দর রাখুন।



নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

কাসিম - অর্থ - বণ্টনকারী?

 তিনি নবীজির প্রথম সন্তান। নবুয়তের পূর্বে তার জন্ম হয়েছে। তার কারণে নবীজিকে আবুল কাসিম (কাসিমের পিতা) বলা হতো। তিনি কতদিন বেঁচে ছিলেন, তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে; অনেকে বলেন— ১৭ মাস। নবীজি সা.-এর সন্তানদের মধ্যে তিনিই প্রথম মারা যান।


আব্দুল্লাহ : বলা হয়— তিনি মক্কায় বাল্যকালেই মারা গেছেন। তবে তার জন্ম কি নবুয়তের পরে না পূর্বে—এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কয়েকজন নবুয়তের পরে হওয়ার মতকে সহীহ বলেছেন। তার উপাধি ছিলো তাইয়িব ও তাহির (উত্তম ও পবিত্র)। তবে কারও মতে তাইয়িব ও তাহির হলো শেষ দুই সন্তানের উপাধি। ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেন— না, দুটিই আবদুল্লাহ রা.-এর উপাধি। [3.(যাদুল মায়াদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১০৩)]



ইব্রাহিম -অর্থ -আদি পিতা?

ইবরাহিম রা. জন্ম গ্রহণ করেন অষ্টম হিজরির যিলহজ মাসে। তার মাতা হলেন মারিয়া কিবতিয়া রা.। নবীজি তাকে উম্মে সাইফের কাছে পালতে দিয়েছিলেন; যিনি আবু সাইফ নামক এক কামারের স্ত্রী। [4.(মুসলিম, হাদিস ২৩১৫)]  নবীজি প্রায়ই মদিনার উঁচু ভূমিতে যেতেন ইবরাহিমকে দেখতে, যেখানে ইবরাহিমের দুধ মায়ের বাড়ি। তাকে চুমু দিতেন এবং তার ঘ্রাণ নিতেন। [5.(বুখারি, হাদিস ১৩০৩)]  দুধপানের বয়সেই তিনি মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর সময় নবীজি কেঁদেছেন। [6.(বুখারি, হাদিস ১৩০৩)]  তার মৃত্যুর দিন সূর্যে গ্রহণ লেগেছিলো। লোকজন বলাবলি করছিল, ইবরাহিমের মৃত্যুতে সূর্যগ্রহণ হয়েছে। নবীজি বললেন—চন্দ্রে বা সূর্যে কারো মৃত্যুর কারণে গ্রহণ লাগে না। কারো বেঁচে থাকার কারণেও না। তোমরা গ্রহণ দেখলে নামাজ পড়, আর দোয়া করো। [7.(মুসলিম, হাদিস ৯১৫)]



জয়নাব - অর্থ - একটি সুগন্ধি ফুল?

 তিনি নবীজির স. বড় মেয়ে। তিনি নবীজির ত্রিশ বছর বয়সকালে জন্মগ্রহণ করেছেন। 3.(সিরাতে ইবনে ইসহাক)  পরিণত বয়সে নবীজি সা. তাকে খাদিজার রা. একান্ত আগ্রহে তার ভাগ্নে আবুল আস ইবনে রবী’র সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। আবুল আস ছিলেন খাদিজার রা. সন্তানের মতো প্রিয় এবং বাণিজ্যে, বিত্তে ও বিশ্বাসে মক্কার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। নবুয়তের পরে খাদিজা রা. ও তার সকল কন্যা ইসলাম আনলেও আবুল আস মুশরিক থেকে যান। তবে কুরাইশরা যাইনাবকে ছেড়ে দিতে বললেও আবুল আস স্ত্রী ত্যাগ করেন নি। যাইনাব রা.-ও পূর্বের মতোই স্বামীর সাথে মক্কায় বসবাস করতে থাকেন। নবীজি সা. তার প্রশংসা করতেন।



বদরের যুদ্ধে আবুল আস বন্দি হন। যয়নব রা. স্বামীর মুক্তিপণ হিসেবে গলার হার খুলে পাঠান; যা খাদিজা রা. তাকে বিয়েতে উপহার দিয়েছিলেন। সেই হার না নিয়ে সাহাবিগণ তাকে মুক্তি দিয়ে দেন। [4.(আবু দাউদ, হাদিস ২৬৯২)]  শর্ত দেন যে, ফিরে গিয়ে যাইনাবকে রা. মদিনায় পাঠিয়ে দিতে। কেননা, বিধান নাযিল হয়েছে উভয়ে একত্রে থাকতে পারবে না। কুরাইশদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আবুল আস যাইনাবকে রা. ফিরিয়ে দেন। [4.(বুখারি, হাদিস ৩০১৬)]  ষষ্ঠ হিজরিতে আবুল আস বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়ার যাওয়ার পথে মুসলমানদের একটি টহল দলের হাতে ধরা পড়েন। পরে নবীজির আগ্রহে তার সম্পদ ফেরত দেওয়া হয়, কারণ সম্পদের অধিকাংশই ছিল মক্কার লোকদের আমানত। তিনি মক্কায় সকল সম্পদ ফিরে দিয়ে প্রকাশ্যে মুসলমান হন।



তার দুই বছর পর অষ্টম হিজরিতে যাইনাব রা. ইন্তেকাল করেন। আবুল আস রা. ইন্তেকাল করেন ১২ হিজরিতে যাইনাবের রা. চার বছর পর।


তার গর্ভে দুটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে— আলী ও উমামা রা.।


মায়ের মৃত্যুর সময় আলী ছিলেন দুগ্ধপোষ্য। তার দুধপিতা মক্কার মুশরিক। তাকে নবীজি সা. ফিরিয়ে আনেন। মক্কা বিজয়ের দিন আলী নবীজির উটের পিছনে বসে ছিলো। আলী তার বাবার জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেন। [5.(শরহে যুরকানি খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৯৭)]


উমামা মায়ের মৃত্যুর সময় ছিলেন ছোট্ট বালিকা। তাকে কাঁধে রেখে নবীজি নামাজ আদায় করতেন। নবীজির আরেক জামাতা চতুর্থ খলিফা আলী রা. তাকে তার খালা ফাতিমার রা. ইন্তেকালের পর বিয়ে করেন। আলীর রা. শাহাদাতের পর তার বিয়ে হয় মুগিরা ইবনে নওফল হাশেমির সঙ্গে এবং মুগিরার স্ত্রী হিসেবেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তার গর্ভে আলী রা. ও মুগীরা রা. কারোরই কোনো সন্তান হয় নি।  [6.(মিন মায়ীনিশ শামায়েল, প্রথম অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)]




রুকাইয়াহ - অর্থ - উন্নতশীলা?

তার জন্ম হয় নবীজির বয়স যখন ৩৩ বছর। উজ্জ্বল সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। প্রথমে তার বিয়ে হয় আবু লাহাবের ছেলে উতবার সাথে। কিন্তু নবুয়তের কারণে মিলনের পূর্বে উতবা তাকে ছেড়ে দিলে ওসমান ইবনে আফফান রা. তাকে বিয়ে করেন। তিনি তার স্বামীর সাথে দুইবার হিজরত করেছেন—হাবশায় ও মদিনায়। নবীজি বদর যুদ্ধে যাত্রা করার প্রাক্কালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার জন্য ওসমান রা., বদরে যেতে পারেন নি, মদিনায় থাকতে হয়। [7.(বুখারি, হাদিস ৩৬৯৮)]  এই অসুস্থতায়ই রুকাইয়া রা. মৃত্যুবরণ করেন। যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সংবাদ দিতে এসে যায়েদ ইবনে হারেসা রা. দেখেন তার কবরের মাটি সমান করা হচ্ছে।


তার ঘরে এক ছেলে জন্ম নেয়—আব্দুল্লাহ। ছয় বছর বয়সে তিনি মারা যা




উম্মে কুলসুম - অর্থ -স্বাস্থ্যবানের মা?

তার আসল নাম  জানা যায় না (কেননা, উম্মে কুলসুম মানে কলুসুমের আম্মা); তিনি এ-উপনামেই পরিচিত। তার প্রথম বিয়ে হয় আবু লাহাবের


আরেক ছেলে উতাইবার সঙ্গে। একই কারণে উতাইবা তাকে ফিরিয়ে দেয়। রুকাইয়া মারা যাওয়ার পরে তৃতীয় হিজরিতে ওসমান রা.-এর সাথে বিয়ে হয় তার। তার স্ত্রী হিসেবেই তিনি আজীবন কাটিয়ে দেন। নবম হিজরিতে উম্মে কুলসুমের রা. মৃত্যু হয়। নবীজি নিজে তার জানাযা পড়ান, তার কবরের পাশে বসেন, চোখ বেয়ে অ্শ্রু ঝরেছিল তার। [8.(বুখারি, হাদিস ১২৮৫)]

উম্মে কুলসুমের কোনো সন্তান হয় নি।




ফাতিমা - অর্থ - দুধ ছাড়ানো শিশুর মা?

চারটি কুনিয়াত নাম আছে ।উম্মে আবিহা,উম্মে আল - হাসানাহ,উম্মে আল - হাসান,উম্মে আল - হাসান।তার জন্মসন সম্পর্কে দ্বিমত আছে—নবুয়তের ৫ বছর পূর্বে নকি নবীজির ৪১ বছর বয়সে। [9.(আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৩)]  দ্বিতীয় হিজরিতে নবীজি তাকে আলী রা.-এর কাছে বিয়ে দেন। [10.(‘মিন মায়ীনিস সীরাত’, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২২৫)]  নবীজির আপনজনদের মধ্যে সবচে’ প্রিয় ছিলেন তিনি। [11.(বুখারি, হাদিস ৬২৮৫ ও ৬২৮৬)] বিশুদ্ধ হাদিস মতে, জান্নাতে এ-উম্মতের নারীদের সর্দার তিনি।


ফাতিমা রা. ইন্তেকাল করেন নবীজির মৃত্যুর ছয় মাস পরেই।
তার তিনটি ছেলে সন্তান হয়— হাসান, হুসাইন ও মুহসিনে। মুহসিন ছোট থাকতেই মারা যান। বাকি দুই দৌহিত্র হাসান ও হুসাইনের রা. মাধ্যমে নবীজির বংশধারার বিস্তার হয়েছে।





ফাতিমার রা. মেয়ে সন্তান ছিল দুইজন— উম্মে কুলসুম ও যয়নব?


উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করেছিলেন ওমর রা.। তার ঘরে যায়েদ ও রুকাইয়া নামে দুটি সন্তান হয়। তবে তাদের দুজনের কোনো উত্তরসূরি হয় নি। তারপর তার বিবাহ হয় আউন ইবনে জাফরের সাথে। তার মৃত্যুর পরে বিবাহ হয় আউনের ভাই মুহাম্মদ ইবনে জাফরের সাথে। তিনিও মারা গেলে তাদের আরেক ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে বিবাহ হয় এবং তার ঔরসে একটি মেয়ে হয়, যার নাম জানা যায় নি। তার স্ত্রী থাকাকালেই তিনি ইন্তেকাল করেন। সুতরাং সেদিক থেকেও তার কোনো ওয়ারিস নেই।


আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর পরে তার বোন, ফাতিমার রা. আরেক মেয়ে যাইনাবকে বিয়ে করেন। তার কয়েকটি সন্তান হয়। [11.(আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৬)]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url