তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ

 তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ?


 তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ,তাবলীগের অর্থ ও প্রকার,মুবাল্লিগে আম ও তার দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্র,মুবাল্লিগে খাছ ও তার দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্র|



তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ
 তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ


তাবলীগ করা কি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন সবার জন্য দাওয়াতের কাজকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন?





 নামায-রোজার মত দাওয়াতের কাজও কি ফরজ?

আসুন জেনে নেই এর সঠিক উত্তর:- নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি হলো প্রত্যেক বালেগ মুসলমানের জন্য ফরজে আইন | আর দাওয়াতে তাবলীগের কাজ আমভাবে ফরজে কেফায়া | মূলতঃ যারা এ সমস্ত কথা বলে তারা তাবলীগের অর্থ, প্রকারভেদ ও উহার প্রয়োগক্ষেত্র সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ ও জাহেল হওয়ার কারণেই উপরোক্ত কথাগুলো পেশ করে থাকে |




তাবলীগের অর্থ ও প্রকার:-

মূলতঃ তাবলীগ সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে তা কত প্রকার ও কি কি এবং তার অর্থ কি, তা জানতে হবে | তাবলীগ শব্দের অর্থ হলো- প্রচার করা | তাবলীগ দু’প্রকার অর্থাৎ সাধারণতঃ ইসলাম দু’ভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে- (১) তাবলীগে ‘আম’ বা সাধারণভাবে, (২) তাবলীগে ‘খাছ’ বা বিশেষভাবে | আবার দ্বীন প্রচারকারী মুবাল্লিগ ও দু’প্রকার- (১) মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক) ও (২) মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক) |




মুবাল্লিগে আম ও তার দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্র:

মুবাল্লিগে আম অর্থাৎ সাধারণ মুবাল্লিগ (দ্বীন প্রচারকারী)- তার বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই | শুধু দ্বীনী সমঝ বা বুঝ থাকলেই চলবে | সে খাছ বা বিশেষভাবে যেমন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজী ও কর্মচারী তথা তার অধীনস্থ সকলকে দ্বীনী আমলের জন্য তথা দ্বীনদারী হাছিলের ন্যজ তাকীদ বা উৎসাহিত করবে | এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফ-এর সূরা তাহরীমের ৬নং আয়াত শরীফে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুণ (জাহান্নাম) থেকে বাঁচাও .



আর বুখারী শরীফ উনার পবিত্র হাদীস শরীফে আল্লাহ্ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

الا كلكم راع وكلكم مسءول عن رعيته


অর্থাঃ- “সাবধান! তোমারা প্রত্যেকেই (নিজের অধীনস্থদের ব্যাপারে) রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে |


আল্লাহ্ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুখারী শরীফ উনার পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বলেন,


بلفوا عنى ولو اية

অর্থঃ- “তোমরা আমার থেকে একটি আয়াত (হাদীছ) হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌছে দাও |”



অন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে- হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমরা সৎ কাজের আদেশ দিব না? অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সমস্ত খারাবী হতে ক্ষান্ত হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি অসৎ কাজে নিষেধ করবো না? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না বরং তোমরা সৎকাজের আদেশ দান করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করতে না পার | তদ্রুপ মন্দ কাজে নিষেধ করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে তা থেকে বেঁচে থাকতে না পার |” (তিবরানী শরীফ)




সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

الدين نصيحة

অর্থঃ- “দ্বীন হচ্ছে নছীহত স্বরূপ |



হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ জিজ্ঞাসা করলেন, কাদের জন্য? নবীজী (ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আল্লাহ্ পাক উনার জন্য আল্লাহ্ পাক উনার প্রিয় রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এবং মুসলমানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য |” (মুসলিম শরীফ)




উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহ মুবাল্লিগে আম ও মুবাল্লিগে খাছ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য | অর্থাৎ এর হুকুম কারো জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি |



কাজেই যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তাদের দায়িত্ব ও ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার আমল করবেন | আর যারা মুবাল্লিগে খাছ, তারাও তাদের দায়িত্ব ও যোগ্যতা এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করবেন |



অতএব প্রত্যেক মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তার ক্ষেত্র হচ্ছে তার অধীনস্থগণ | যাদেরকে তার তরফ থেকে দ্বীনের জন্য তা’লীম দেয়া ও তাকীদ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য | অর্থাৎ এটা হচ্ছে তাবলীগে খাছ যা করা-মুবাল্লিগে আম-এর জন্য ফরজে আইনের অন্তর্ভূক্ত | (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, রহুল মায়ানী)





 মুবাল্লিগে খাছ ও তার দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্র?

মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), মুবাল্লিগে আম-এর মত নয় | অর্থাৎ তিনি কেবল তার অধীনস্থদেরই নয় বরং তিনি আমভাবে সকল উম্মতকেই হিদায়েত করার উপযুক্ত | পক্ষান্তরে মুবাল্লিগে আম কেবল তার অধীনস্থদেরই বলার যোগ্যতা রাখেন |



আর যারা খাছ মুবাল্লিগ অর্থাৎ বিশিষ্ট প্রচারক, উনার প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের (কুরআন শরীফ-সুন্নাহ্ শরীফ তথা ইসলামের) দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে এবং বদ্ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব |” (সূরা ইমরান/১০৪)



অর্থাৎ তাকে অবশ্যই দ্বীনী বিষয়ে বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে এবং ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফে বিশেষ দক্ষতা তথা ফরজ, ওয়াজিব ও সু্ন্নত পরিমাণ ইলম, আমল এবং ইখলাছ হাছিল করতে হবে | এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “কেন তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা ফেরক্বা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা দ্বীনী ইলমে দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে | আশা করা যায়, তারা বাঁচতে পারবে |” (সূরা তওবা/১২২)



(তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মা’য়ানী, রুহুল বয়ান, কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)

আর মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,


تعلموا العلم وعلموه الناس

অর্থঃ- “তোমরা দ্বীনী ইলম শিক্ষা কর এবং মানুষকে তা শিক্ষা দাও |” (দারেমী, দারে কুতনী, মিশকাত)



মূলতঃ যাহারা মুবাল্লিগে খাছ, উনাদেরকে অবশ্যই উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী হতে হবে | আর হক্কানী-রব্বানী আলেমগণের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন |” (সূরা ফাতির/২৮)



এ আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে হযরত ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার মধ্যে যতবেশী আল্লাহ্ ভীতি রয়েছে, তিনি তত বড় আলেম |”



আর পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে,

من ارباب العلم ؟ قال الذين يعملون بما يعلمون فال فما اخرج العلم من قلوب العلما ء ؟ قال الطمع

অর্থঃ- “(জিজ্ঞাসা করা হলো) আলেম কে? উত্তরে বললেন, যাহারা ইলম অনুযায়ী আমল করেন | পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আলেমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি বললেন, লোভ (দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা) |” (দারেমী, মেশকাত)



অর্থাৎ যিনি ইলম, আমল ও ইখলাছ হাছিল করেছেন, তিনিই হাক্কানী আলেম, আর তিনিই নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ | উনাদের শানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

العلماء ورثة الانبياء

অর্থঃ- “আলেমগণ হলেন-নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী |” (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ, মিশকাত শরীফ)



অর্থাৎ নবী আলাইহিস সালামগণের দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র যেমন আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য, তদ্রুপ যাহারা মুবাল্লিগে খাছ, উনারা নবী আলাইহিস সালামগণের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে উনাদেরও দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য | আর এ আম তা’লীম ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত | যা অতীতে ও বর্তমানে উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাদ্রাসায় পড়িয়ে, মসজিদে ইমামতি করে, কিতাবাদি লিখে, ওয়াজ-নছীহত করে ইত্যাদিভাবে দাওয়াত ও তা’লীম-তালক্বীন দিয়ে হিদায়েতের কাজ করে মুবাল্লিগে খাছ-এর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, তাবলীগে আম-এর (ফরজে কেফায়ার) ও তাবলীগে খাছ-এর (ফরজে আইনের) খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন |


মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তাবলীগে আম করার হুকুম





 মুবাল্লিগে খাছ-এর যোগ্যতা ও তাবলীগে আম-এর শর্ত?

স্মরণীয় যে, যারা মুবাল্লিগে আম এবং যাদের জন্য শুধু তাবলীগে খাছ করা ফরজে আইন, তাদের জন্য কোন ক্রমেই এবং কশ্মিনকালেও তাবলীগে আম বা ব্যাপকভাবে দ্বীন প্রচার করা (যা মুবাল্লিগে খাছ তথা উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের জন্য নির্দিষ্ট তা) জায়েয নেই |



এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদিন এক লোক উনার সাক্ষাতে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কর? সে জাওয়াব দিল, দ্বীন প্রচার করি | তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি কি ঐ সকল আয়াত শরীফের আমল করেছ? যা পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-



(১) সূরা সফের ২নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা করনা, তা কেন বল?”

“তুমি কি এ আয়াত শরীফ-এর আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না 




(২) তিনি আবার বললেন যে, মহান আল্লাহ্ পাক সূরা বাক্বারার ৪৪নং আয়াত শরীফে বলেছেন, “তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করে থাক |”

“তুমি কি এ আয়াত শরীফ-এর আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না 




(৩) পুণরায় তিনি বললেন, “তুমি কি ঐ আয়াত শরীফ-এর আমল করেছ? যা হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমকে বলেছিলেন, “আমি এটা চাইনা যে, তোমাদেরকে যে কাজ থেকে নিষেধ করি, আমি তার খিলাফ করি | অর্থাৎ আমি যা বলি, তা করি আর যা বলিনা, তা করিনা |” (সূরা হুদ/৮৮)



তুমি কি এ আয়াত শরীফ-এর আমল করেছ? সে জাওয়াব দিল, না |

তখন হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম বললেন, “তুমি প্রথমে এ আয়াত শরীফসমূহের আমল কর, অতঃপর তুমি দ্বীন প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত কর |” অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর আমল ব্যতিরেকে তাবলীগে আম করা জায়েয নেই |



উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে খাছ মুবাল্লিগে আম ও খাছ উভয়ের জন্যেই ফরজে আইন | আর তাবলীগে আম শুধুমাত্র মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী আলেমগণের জন্যই প্রযোজ্য, যা উনাদের জন্যে ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত |



অতএব, মুবাল্লিগে আম বা সাধারণ লোকদের জন্যে তাবলীগে আম করা কখনো শুদ্ধ হবেনা বরং তাদের জন্যে তা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম হবে |



বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমানে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ যাকে তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাবলীগে আম বলে থাকে, (যা প্রকৃতপক্ষে মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত যদি আক্বীদা শুদ্ধ হয়ে থাকে) যদি তাদের কথা মোতাবেক সেটাকে তাবলীগে আম ধরা হয়, তাহলে তো অবশ্যই সেটা মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য করা উচিৎ ছিল | অথচ তা এমন সব লোকেরা করে থাকে যারা মুবাল্লীগে খাছ তো নয়ই, বরং তাদের মধ্যে অনেকেই মুবাল্লিগে আম-এরও উপযুক্ত নয় | যদিও কিছু সংখ্যক মুবাল্লিগে আম রয়েছে |



অতএব তাবলীগে আম মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্যই করা ফরজে কেফায়া | যা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম | আর সাধারণ লোকদেরতো প্রশ্নই উঠেনা |



এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অনেক সময় দেখা যায় এমন কতক লোক, যারা মুবাল্লিগে খাছ ও আম কোনটাই নয়, তারা অনেকেই নামাযের জামায়াতে যাওয়ার সময় বা নামায পড়ার সময় অন্যকে নামাযে ডেকে নিয়ে যায়, রোযার মাসে রোযা রাখার কথা বলে, ইত্যাদি অনেক নেক কাজের কথাই বলে থাকে, যা তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিলনা তবে সেটার ফায়সালা কি?



এর ফায়সালা হলো, ঐ সকল লোক মুসলিম শরীফ-এর বর্ণিত হাদীস শরীফ- ( الدين نصيحة অর্থাৎ “দ্বীন হচ্ছে অপরের ভাল কমনা করা |”) এর মেছদাক বা নমুনা | অর্থাৎ এদেরকে কেউ হিদায়েতের দায়িত্ব দেয়নি বা এরা হিদায়েতের ব্যাপারে কোন দায়িত্ব গ্রহণ করেনি | এরা হচ্ছে মানুষের খয়েরখাঁ বা হিতাকাঙ্খী |



এখানে উল্লেখ্য যে, তিবরানী শরীফ-এর উপরোক্ত হাদীছ শরীফে দেখা যাচ্ছে যে, সৎকাজ না করলেও অপরকে সৎ কাজ করতে বলা হয়েছে | অথচ পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “তোমরা ঐ কথা বল কেন, যা তোমরা নিজেরা করোনা |”



তাহলে এই আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর বক্তব্যের মধ্যে ফায়সালা কি?


মূলতঃ এর ফায়সালা উলামায়ে মুহাক্কিক, মুদাক্কিকগণ দিয়েছেন | উনাদের মতে তিবরানী শরীফ-এর হাদীছ শরীফে সৎ কাজ না করলেও সৎ কাজের দাওয়াত দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য | যেমন কোন বাবা নিজে নামায বা অন্যান্য নেক কাজ না করা সত্বেও তার সন্তান ও অধীনস্থদের নামায বা অন্যান্য নেক কাজের জন্য বলতে পারেন |



আর পবিত্র কুরআন শরীফ-এর উক্ত আয়াত শরীফে নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা বলার জন্য যে নিষেধবাণী করা হয়েছে, তা হলো- মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য | অর্থাৎ মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য নিজে কোন সৎ কাজ না করে অপরকে তা করতে বলা জায়েয নেই |



এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মি’রাজ শরীফে যান, তখন দেখলেন কিছু লোকের জিহ্বা আগুনের কেঁচি দ্বারা কাটা হচেছ | তখন জিজ্ঞাসা করা হলো- এরা কারা? হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, এরা ঐসকল লোক, যারা অন্যকে নেক কাজের উপদেশ দিতো কিন্তু নিজেরা তা করতো না |”



অতএব প্রমাণিত হলো যে, যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তিবরানী শরীফ-এর বর্ণনা মোতাবেক সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন | আর যারা মুবাল্লিগে খাছ, তারা পবিত্র কুরআন শরীফ-এর উক্ত আয়াত শরীফ মোতাবেক নিজে সৎকাজ না করে অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন না | কারণ যদি সকলের জন্যে আমভাবে একথা বলা হয় যে, সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজের কথা বলা জায়েয, তবে মি’রাজ শরীফ-এর হাদীছ শরীফে বর্ণিত লোকদের জিহ্বা কাটা হলো কেন? এতে বুঝা গেল যে, তিবরানী শরীফ-এর উক্ত হুকুম সকলেন জন্যে প্রযোজ্য নয় | বরং যারা মুবাল্লিগে আম, তাদের জন্যেই প্রযোজ্য | আর পবিত্র কুরআন শরীফ-এর উক্ত আয়াত শরীফ ও মি’রাজ শরীফ সম্পর্কিত হাদীছ শরীফখানা যারা মুবাল্লিগে খাছ, তাদের জন্যে প্রযোজ্য |



সুতরাং হাক্বীক্বতে উক্ত হাদীছ শরীফ ও আয়াত শরীফ-এর মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই | অনেকে ব্যাখ্যা না জানার কারণে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলে থাকে | মূলতঃ উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রযোজ্য ও অনুসরণীয় |



এছাড়া নিজের অধীনস্থ পরিবার পরিজনের উপরে মুবাল্লিগে আম হিসেবে দ্বীনের তাবলীগ করা ফরয কিন্তু আত্মীয়-স্বজনদের উপরে আমভাবে দ্বীনের তাবলীগ করা ফরয নয়। বরং কেবল মাত্র মুবাল্লিগে খাছ হলেই তার জন্য আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্যদেরকে দ্বীনের তাবলীগ করা ফরজে কেফায়াহ |



এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক সূরা তওবার ১২২নং আয়াত শরীফে বলেন, “সকল মু’মিনদের জন্য একসাথে কোন কাজে বের হওয়া উচিৎ নয় |”



ইমাম, মুজতাহিদগণ এই আয়াত শরীফ থেকে উছূল বের করেছেন যে, মু’মিনদের জন্য সমষ্টিগতভাবে কোন কাজ করা ফরযে আইন নয় বরং তা ফরযে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত | (তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মা’য়ানী, রুহুল বয়ান, ফাতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি)



অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য যেসব কাজ সমষ্টিগতভাবে করতে হয়, সেটা ফরযে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত | তা কখনো ফরযে আইন নয়, যা উপরোক্ত আয়াত শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে |



অতএব যদি কেউ বলে- মূর্খ হোক, আলেম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরযে আইন | তবে তা সম্পূর্ণই কুরআন শরীফ-সুন্নাহ্ শরীফ ও ইজমা-ক্বিয়াসের খিলাফ বা পরিপন্থী হবে | আর ফরযে কেফায়াকে ফরজে আইন বলাও হারাম ও কুফরীর নামান্তর, যা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ওয়াজিব |



আর বিদায় হজ্বের ভাষণে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বক্তব্য প্রদান করেছেন, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের ইলম বকদরে নেছাব হওয়ার কারণে, তাদের অজ্ঞতা ও জেহালতের জন্য সে হাদীছ শরীফ যথাযথভাবে বুঝতে না পেরে তার অপব্যাখ্যা করছে | যেমন তারা বলে থাকে যে, “সমস্ত উম্মতের উপরে দাওয়াতের কাজকে ফরজ করেছেন |”



মূলতঃ বিদায় হজ্বের ভাষণে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছ, তারা অনুপস্থিত ব্যক্তিদেরকে আমার কথা পৌছে দিবে |”



আলোচ্য হাদীছ শরীফে আল্লাহর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ করে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের মধ্যে উনারা তখন আরাফার ময়দানে উপস্থিত ছিলেন, কেবলমাত্র উনাদেরকে লক্ষ্য করেই একথা বলেছেন, এর দ্বারা সমস্ত উম্মতদেরকে বুঝায় না | কারণ উনারা সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন, উনাদের প্রতি উক্ত নির্দেশ বর্তায় না | এছাড়া সমস্ত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণই হলেন মুবাল্লিগে খাছ এবং সে দায়িত্ব উনারা যথাযথ ভাবেই পালন করেছেন | কাজেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বানী দ্বারা সমস্ত উম্মতের উপরে দাওয়াতের কাজকে ফরয করা হয়নি বরং এ হুকুম শুধুমাত্র হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ও মুবাল্লিগে খাছদের উপরে বর্তায় |


Next Post Previous Post
1 Comments
  • GODWIN'S TECH
    GODWIN'S TECH August 27, 2021 at 8:22 AM

    This comment has been removed by a blog administrator.

Add Comment
comment url