বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ওপর ইউক্রেন সংকটের প্রভাব পড়তে পারে কী
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ওপর ইউক্রেন সংকটের প্রভাব পড়তে পারে কী?
দেশটির স্থল, আকাশ ও নৌপথে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ হামলায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিকারকদের, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ওপর ইউক্রেন সংকটের প্রভাব পড়তে পারে কী |
বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্যপণ্য ইত্যাদি আমদানি করে থাকে রাশিয়া থেকে। তা ছাড়া এখন তৈরি পোশাক শিল্পের নতুন বাজার হিসাবেও বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়াকে। কিন্তু ইউক্রেনের ওপর হামলার জের ধরে রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের ওপর?
পোশাক খাতের কয়েকজন উদ্যোক্তা বললেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য। সেই তুলনায় ইউক্রেনে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। তবে রাশিয়ার বাজার মাঝারি আকারের। যুদ্ধের কারণে এই দুই বাজারের রপ্তানি স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়বেন অল্পসংখ্যক রপ্তানিকারক। তবে যুদ্ধের সঙ্গে যদি ইউক্রেনের আশপাশের ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো জড়িয়ে পড়ে, তাহলে পুরো পোশাকশিল্পের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৬০-৬১ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত দেশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। তার মধ্যে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৫৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, দেশীয় মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৭৪ কোটি টাকার সমান। অন্যদিকে ইউক্রেনে রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ডলারের বা ১০০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক।
ইতিমধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এতে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের পণ্যের ওপরই কমবেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি আরও বলেন, পোশাক রপ্তানিতে এখনো সরাসরি যুদ্ধের প্রভাব পড়েনি। তবে ইউক্রেনে রুশ হামলায় আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ, যুদ্ধ যদি আশপাশের দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে রপ্তানি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ, ইউক্রেনের পাশেই জার্মানি ও পোল্যান্ডের মতো বড় বাজার রয়েছে।
তৈরি পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় প্লাস্টিক, চামড়া, জুতা, সিরামিক, খেলনা, ম্যাট্রেস, হিমায়িত খাদ্য, পাট ইত্যাদি রপ্তানি হয়। আর ইউক্রেনে পোশাকের বাইরে ওষুধ, প্লাস্টিক, জুতা, ম্যাট্রেস, খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য যায়।
তৈরি পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় প্লাস্টিক, চামড়া, জুতা, সিরামিক, খেলনা, ম্যাট্রেস, হিমায়িত খাদ্য, পাট ইত্যাদি রপ্তানি হয়। আর ইউক্রেনে পোশাকের বাইরে ওষুধ, প্লাস্টিক, জুতা, ম্যাট্রেস, খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য যায়।
রাশিয়ার তৈরি পোশাকের বাজার প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলারের। এই বাজারে আমাদের হিস্যা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেটি কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রভাবটা কতো ব্যাপক হবে, সেটা নির্ভর করবে এই সংকট কতদিন ধরে চলে, তার ওপরে। যদি নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে সেটার মাত্রা বাড়তেই থাকবে। পক্ষ-বিপক্ষের প্রশ্ন আসবে। তখন তা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ হয়ে উঠবে।'' তিনি বলছেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশ কার সঙ্গে ব্যবসা করছে, সেটাই যে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। বিশ্বে যদি কোন পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তাহলে সেটা ব্যবহারকারী সব দেশের ওপরেই তার প্রভাব পড়ে।