শিশুর মুঠোফোন আসক্তি দূর করতে যা করবেন
শিশুর মুঠোফোন আসক্তি দূর করতে যা করবেন
শিশুদের মোবাইল আসক্তির কারণ।শিশুদের প্রযুক্তির আসক্তি ও করনীয়।শিশুদের উপর প্রযুক্তির প্রভাব।প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাব।
শিশুর মুঠোফোন আসক্তি দূর করতে যা করবেন |
বর্তমান যুগে মোবাইল খুবই প্রয়োজনীয় এবং অপরিহার্য বস্তু। কিন্তু এর মন্দ দিকটা হলো—ক্রমাগত ও অত্যধিক ব্যবহার এর প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। টিভি, মোবাইল গেম বা যেকোনো ধরনের ভার্চুয়্যাল বিনোদনের সময় মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয়। এই ডোপামিন আমাদের মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। তার ফলে অতি সহজেই আমরা আসক্ত হয়ে পড়ি। মুঠোফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার শৈশবে সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেসব শিশু বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন খেলাধুলা, দৌড় বা সাইকেল চালানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে, তারা মোবাইল বা ভিডিও গেমে আসক্ত হয় বেশি। এতে বাধাগ্রস্ত হয় তাদের নানা রকম দক্ষতার বিকাশ। এর কারণে কোনো কিছুতে মনোনিবেশ এবং বাস্তব জীবনে কার্যকর যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষমতাও বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া চোখের ক্ষতি তো আছেই।
শিশুদের মোবাইল আসক্তির কারণ
টিভি, মোবাইল গেম বা যে কোনো ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট দেখার সময়ে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয়। এ ডোপামিন আমাদের মনে এক ভালোলাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। তার ফলে অতি সহজেই আমরা এ ধরনের এন্টারটেইনমেন্ট মিডিয়ামগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়ি। * শিশু সময়মতো খেতে চাইবে না।
শিশুদের প্রযুক্তির আসক্তি ও করনীয়
অন্যদিকে এসব বিষয় ছাড়াও শিশুর দীর্ঘ সময় মোবাইল, ট্যাব অথবা কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে শিশুর চোখ কিংবা মানসিক বৃদ্ধিতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই শিশুকে এসব বিষয় থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করুন। শুরু থেকেই তার সঙ্গে সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। শিশুর সঙ্গে বন্ধুর মতো সময় দিন।
শিশুদের উপর প্রযুক্তির প্রভাব
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা আমাদের মস্তিস্ককে অকার্যকর করে দিচ্ছে। 'প্রযুক্তি অ্যাডিকশন'-এর কারণে শিশুদের মানসিক বিকাশে যে ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে তা হলো, শিশুদের বিকাশ বিলম্বিত হতে পারে।
প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাব
প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাবের দুইটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হল : * বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে কয়লা পুড়িয়ে আমরা বিদু্যুৎ উৎপন্ন করি কিন্তু এর ফলে বায়ুও দূষিত হয়। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও এসিড বৃষ্টির মতো পরিবেশের উপর বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে।
পরিবার থেকে একটু সচেতন থাকলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি কমাতে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। করণীয়—
(১)মনে রাখবেন, বাড়ির খুব দরকারি যন্ত্রগুলোর মতো (ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি) মোবাইল ফোনও একটি অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস। এটা শিশুর খেলার সামগ্রী নয়। শিশুদের বুঝিয়ে বলুন টিভি বা মোবাইলের আসক্তির খারাপ দিকগুলো।
(২)শিশুদের একাকিত্ব দূর করার চেষ্টা করুন। নানা ধরনের অ্যাকটিভিটি প্ল্যান করুন। যেমন নাচ, গান, অবৃত্তি, বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখান। সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে মিশতে ও খেলতে দিন।
(৩)শিশুদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারলে খুব ভালো। ছোটবেলা থেকে রোজ রাতে শোবার আগে সন্তানকে যদি বই থেকে গল্প পড়ে শোনান, তাহলে তার মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
(৪)মাঝেমধ্যে তাদের নিয়ে খেলাধুলা করতে বা ঘুরতে যান। শৈশবকে উপভোগ্য করে তুলুন। যারা শহরে থাকেন, তারা সপ্তাহে এক দিন বা মাসে দুই দিন শিশুকে নিয়ে প্রকৃতির কাছে যেতে পারেন।
(৫)ইন্টারনেটে কী ধরনের ভিডিও শিশুরা দেখছে, লক্ষ রাখুন।
(৬)শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহার ও স্ক্রিন টাইমের সময় নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।শিশুদের ঘরের কাজে দায়িত্ব দিন। সংসারের ছোট ছোট কাজে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করুন।
(৭)শিশুকে খাওয়ানোর সময় বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে মোবাইল গেম, কার্টুন দেখানোর বা গ্যাজেটের অভ্যাস করবেন না। এ সময় গল্প শোনানোর অভ্যাস করুন।
(৮)নিজেদের ব্যস্ততার জন্য সন্তানকে মোবাইল গেমে, ভিডিওতে আসক্ত করা অপরাধের শামিল। অনেক অভিভাবক নিজেও ফেসবুক বা টিভি সিরিয়াল, গেম বা গ্যাজেটে আসক্ত। সন্তানকে গুণগত সময় দিন।
(৯)পাজল গেম শিমুর মানসিক বিকাশ উন্নত করে। পাজলের অংশ মিলিয়ে পৃথিবীর ম্যাপ হলো বা কোনো ছবি তৈরি হলো। সেরকম খেলায় নিয়োজিত করুন শিশুকে। একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে এ কাজ করার জন্য। খেলার ছলে শিশুর মানসিক বিকাশও হবে এর ফলে।
(১০)নির্দিষ্ট সময়ের পাজল মিলিয়ে ফেলতে পারলে শিশুকে একটি ছোট্ট উপহারও দিতে পারেন। এতে তার মধ্যে খেলার ইচ্ছেও জন্মাবে। মনে রাখবেন, বকুনি দিয়ে কিংবা মেরে শিশুকে শাসন করবেন না কিংবা তার কাছ থেকে স্মার্টফোন কখনো কেড়ে নিবেন না।